আমার প্রথম বিদেশ যাত্রা (পর্ব- ১)
অদিতি মন্ডল,
কলকাতা
ছোটবেলা থেকেই ভ্রমণ পিপাসু আমি। কর্মসূত্রে এবং অবসরে দেশের বিভিন্ন
জায়গায় ঘোরার সুযোগ হলেও বিদেশে যাওয়ার তেমন কোন সুযোগ আসেনি। তবে
বিদেশে যে ভ্রমণ করবই তেমন প্রত্যাশা নিয়ে পাসপোর্ট বানানোই ছিল। দূর্গা
পূজা 🪔আসবো আসবো করছে। আকাশে বাতাসে পূজা পূজা গন্ধ। বাংলায় বসবাস করি
এবং বাঙালি হওয়ার সুবাদে প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের রূপ গন্ধ চিত্র বেশ
সুখকর। চিরচেনা শরতের আকাশ যেন বাঙালি মনকে এক অন্যরকম নস্টালজিক অনুভূতি
প্রদান করে। ঝকঝকে নীল আকাশে পেঁজা তুলো ☁☁☁ মেঘ ধীর গতিতে ভেসে চলেছে।
চুল ঘেঁটে দেওয়া বাতাসের হালকা স্পর্শ যেন বলে যায় 'মা' আসছে।
পূজোর কেনাকাটা 🛍 ও কিছু কিছু করে ফেলেছি ইতি মধ্যে, এমনই একদিন হঠাৎ
আমার স্বামী তমাল এসে বলল deputation- এ ওকে লন্ডনে পাঠাচ্ছে। Natural
History Museum - থেকে invitation এসেছে। তমাল ভারতের প্রাণী সর্বেক্ষণের
একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী।
তমাল বলল যে ও চায় আমিও সঙ্গে যাই। মনটা আমার যেমন নেচে উঠলো 💃তেমনই
আবার কেঁদে উঠলো😩, দুর্গাপূজা ছেড়ে যেতে হবে মনে করলেই যেন মনটা হু হু
করে ওঠে🥺
তমাল বোঝালো যে এবার না হয় বিদেশেই দুর্গাপূজা দেখে আসবে, আমিও মনকে
বোঝালাম যে এ বছর না হোক সামনের বছর না হয় কলকাতার পূজা দেখব। যাই হোক
তাড়াহুড়ো করে ভিসার জন্য এপ্লাই করা হলো VFS Website- এ। এর পর
নির্দিষ্ট দিনে VFS Office এ ইন্টারভিউ এর জন্য নির্দিষ্ট সময়ে
আমরা🚶♀🚶♂ পৌঁছে গিয়ে সমস্ত রকম স্টেপ ফলো করে ইন্টারভিউ দিলাম।

ইন্টারভিউ এর সময় আমাদের দুজনকে 🙎♀আলাদা🙍♂ আলাদা ভাবে রুমের ভিতরে
ঢুকিয়ে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করা হয়। যেমন আমরা লন্ডন যাচ্ছি কেন, ওখানে
আমাদের কেউ আছেন কি না, কি করবো আমরা ওখানে গিয়ে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর
আমাদের 10 আঙুলের ✋🤚ছাপ এবং চোখেরও 👁ছবি নেওয়া হলো।
তারপর যথারীতি ভিসা অফিস থেকে বেরিয়ে আমরা 🏡বাড়ি চলে এলাম এবং ভিসার
অপেক্ষা করা ছাড়া আর অন্য কোন উপায় ছিল না।
দেখতে দেখতে 🤔🤔কেটে গেল দুটো সপ্তাহ। এরপর ভিসা অফিস থেকে ফেরার প্রায়
15 দিন পর আমাদের হাতে ভিসা চলে এলো। আমি যাচ্ছি spouse ground academic
visa - তে। আমার মনে তো দারুন খুশি যেন লাড্ডু ফুটছে🎉🎉🎊 । সারা
ভারতবর্ষ প্রায় চষে ফেলেছি কিন্তু বিদেশ যাওয়া হয়নি আমার, এবার সেই
অপূর্ণ সাধ পূর্ণ হতে চলেছে; খুশি তো হবোই🤩🤩🤩 তার উপরে একেবারে যে সে
দেশ নয় বিলেতে যাব বলে কথা।
কিন্তু তাই বলে ভাববেন না, যে এখনই আমরা বিমানের টিকিট কেটে বিমানের🛫
চড়ে বসলাম আর লন্ডনে পৌঁছে 🛬গেলাম😁😁 দাঁড়ান বন্ধু আসতে, এখনো অনেক
কিছু করতে হবে তবেই না বিদেশ যাওয়া😆
এরপর আমরা বিদেশ যাওয়ার জন্য আমাদের বীমা করালাম। যাতে করে বিদেশে গিয়ে
আমাদের পাসপোর্ট অথবা কোন ডকুমেন্টস হারিয়ে গেলে অথবা চুরি হয়ে গেলে
কিংবা কোন কারণে আমরা অসুস্থ হয়ে গেলে চিকিৎসা করানোর জন্য আমাদের কোন
অসুবিধা যেনো না হয়।
গুগল বাবা জিন্দাবাদ! 😀
💻ইন্টারনেট দেখে গুগল 🖥ঘেঁটে সেই সময়কার লন্ডনের আবহাওয়া সম্বন্ধে
জানতে পারলাম, দেখলাম সেই সময় তাপমাত্রা ৫° থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের
মধ্যে থাকবে, এবং একজন কলকাতাবাসী হিসেবে আমাদের জন্য বেশ ঠান্ডা! 🥶🥶
আর সবাই জানে বাঙালী শীত কাতুরে, তার ওপর ছোট থেকে আমার আবার একটু
ঠান্ডার ধাত। ঠান্ডা লাগলে আর দেখতে হবে না একেবারে সর্দি, কাশি, মাথার
যন্ত্রণা, জ্বর জাড়ি বাধিয়ে বসে থাকবো 🤧😪🤒
শেষে ঘুরতে গিয়ে শরীর খারাপ হলে কি কেলেঙ্কারি টাইনা হবে? ঘোরার
আনন্দটাই মাটি........
তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য পোশাক গুলো সরিয়ে রেখে লন্ডনের
আবহাওয়া অনুযায়ী আমাদের পোশাক আশাকও নিতে হবে। কিন্তু আবার এও জানলাম
৩০ কেজির বেশি জিনিস নিয়ে যাওয়ার ও উপায় নেই! তো আমাদের ব্যাগ পত্র
খুব হিসেব করে বাঁধা ছাঁদা করতে হলো!

এরপর এয়ার ইন্ডিয়ার আসা-যাওয়ার টিকিট কাটা হল। যাবার সময় দমদম
এয়ারপোর্ট থেকে via দিল্লি হয়ে সোজা 🛫লন্ডনের হিথরো এয়ারপোর্ট আর
ফেরার সময় via মুম্বাই হয়ে কলকাতা 🛬ফেরা।
বিদেশে গিয়ে কোথায় থাকবো বা কেমন জায়গায় থাকা উচিত তা নিয়ে কিছু
চেনা জানা লোকের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝলাম বিদেশে গিয়ে আমাদের ভারতীয় বা
বাঙ্গালীদের বিশেষ করে খাবারের জন্য হোম-স্টে নিলে ভালো হয়। কারণ
হোম-স্টে তে থাকলে নিজেরা রান্না 🫕করে নিজেদের পছন্দ মতন খাবার🍛 খেতে
পাব।
বিদেশের ঐসব সব কেক🍰 ব্রেড🍞 ডোনাট 🥯পিজা 🍕 বার্গার 🍔খেয়ে দিন
কাটাতে হবে না ।
অগত্যা সেই অনলাইনই ভরসা! অনলাইনে দুজনে মিলে খুঁজে খুঁজে একটা হোম-স্টে
বুক করলাম ৭৬ থ্রনটন গার্ডেন -এ। এখানে খরচ ও একটু কম হবে এবং তমালের
অফিসও একটু কাছেই হবে, প্রায় ৪.৫ মাইল এর মতো।
লন্ডনে ইউরো💶 চলে তাই ব্যাংকের ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ ব্রাঞ্চ থেকে
বেশ কিছু টাকা ইউরো 💶করিয়ে নেওয়া হলো, বিদেশে কখন কি লাগে।
তমাল জানালো ওখানে বেশিরভাগ কার্ডেই পে হয়। তাই ডেবিট ও ক্রেডিট সব
কার্ডগুলোই💳 ভালো করে গুছিয়ে নেওয়া হলো।
একটা ডকুমেন্টস এর ব্যাগে সমস্ত ডকুমেন্টস ভরে নিলাম, বিদেশে ডকুমেন্টস
এর ব্যপারে নাকি ভীষণ কড়া কড়ি, সব জায়গাতেই ডকুমেন্টস সো করতে হতে
পারে।
কিছু ওয়েবসাইট খুঁজে 👩💻👨💻খুঁজে কিছু দরকারী ইনফরমেশন কালেক্ট করেছিলাম
আপন মনেই, আর ইন্টারনেটের কৃপায় সিটি ম্যাপার অ্যাপ যা খুবই দরকারি
লন্ডনের রাস্তায় নির্দিধায় চলার জন্য ডাউনলোড করে নিলাম।
আগে খোঁজ নিয়ে দেখেছিলাম লন্ডনের ওয়েদার পাঁচ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি
সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করবে। সেই মতো ফুল 👖প্যান্ট শার্ট 🧥কোট
👔টাই ও অন্যান্য গরম জামা 🥼কাপড় দুজনের জন্যই বাক্স পেঁটরা ভরে নিলাম
সাথে নিলাম সু👢 স্যান্ডেল 👡ইত্যাদি আর হালকা কিছু জুয়েলারি💍।
দুর্গাপূজার দুদিন দুটো দিন অন্তত খুব বাঙালির সাজে সাজতে ইচ্ছে করে সেই
মতো শাড়ি🥻 গহনা ও নিয়ে নিলাম।
ও মা! 🤦♀বেরোনোর আগের দিন আর এক বিপদ এসে হাজির, হঠাৎ শুনি ৩০ কেজি নয়
তেইশ কেজি করে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া যাবে।
আবার খোল....খোল....খোল.....বাক্স খোল....
কোথায় কি এক্সট্রা জিনিস আছে টেনে বের করে দেখ যাতে করে ওজন ২৩ কেজির
মধ্যে থাকে। এতদিন আগে থেকে জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়া, সবকিছু টেনে বের
করে আবার নতুন করে সাজানো! আর যেটাতেই হাত দিচ্ছি মনে হচ্ছে সেটাই
এসেনশিয়াল সেটাই ভীষণ দরকারি। কোনটা ছেড়ে কোনটা নিই বুঝতে বুঝতেই মাথা
খারাপের অবস্থা🙇♀!

শেষে আমাকে সরিয়ে দিয়ে তমাল বলল ও নিজেই প্যাকিং 🧳করবে এবং ফাইনালি
তমালই প্যাকিংটা🧳 সম্পূর্ণ করেছিল।
ওহো আপনাদের জানাতেই তো ভুলেই গেছি, যে হোম স্টে-তে থাকবো তাই নিজেরা
রান্নাবান্না 🫕করে খাব। সেইমতো বাড়ি থেকে 🍲কড়া, হাঁড়ি, কুকার 🍽
বাসনপত্র, মসলা পাতি, চাল, ডাল, আলু, ইত্যাদিও সঙ্গে করে নিয়েছিলাম। তাই
স্বাভাবিকভাবেই দেখ বেশ ভারী হয়েছিল আর সেখান থেকেই খাবার সরানো যায়
না। তাই কিছু কিছু নিজেদের জামা কাপড় সরিয়ে দিয়ে তবে ব্যাগের ওজন ৩০
কেজি থেকে ২৩ কেজি তে করা গেছিল।
প্রথমবার বিদেশে যাওয়ার আনন্দে অনেক জামাকাপড় নিয়েছিলাম। এখানে ঘুরবো
ওখানে ঘুরব এইভাবে ফটো 📸তুলব ওইভাবে ফটো 📸তুলব। কিন্তু সেসব দেখি এখনই
মাঠেই মারা যাবে! ঘরেই সবকিছু ছেড়ে রেখে দিয়ে যেতে হবে! আমার যে কি
ভীষণ কান্না 😩পাচ্ছিল তখন সে আর বলে বোঝানোর নয়। মহিলাদের জিনিসপত্র,
বিশেষ করে সাজগোজের জিনিসপত্র থাকাতে একটু বেশিই হয়ে যায়। তবে ঈশ্বর
সহায়করে🙏! শেষ মুহূর্তে আমরা এয়ার ইন্ডিয়ার কাস্টমার কেয়ারে কল করে
জানতে পারি যে এক একজন প্যাসেঞ্জার ২৩ কেজি করে দুটি লাগেজ এবং ৭ কেজি
হ্যান্ডব্যাগ💼 ক্যারি করতে পারবেন। তাই শেষ সময়ে হলেও আমার
সাজগোজের💅💍💄 জিনিস বা জামাকাপড় 👖👚কিছু কম করতে হয়নি। ফাইনালি আমার
মনের মতন ছবি তোলার📸 পোষাক আসাক আমি নিয়ে যেতে পেরেছিলাম সঙ্গে
করে।😁😁
এদিকে আর এক বিপদ! বিদেশের অফিসারদের জন্য কি গিফট 🎁 কিনব, কেমন কিনব,
কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শেষে এয়ারপোর্ট থেকে পেয়ে গেলাম বাঙালির
ঐতিহ্য পোড়ামাটির এক চালা দুর্গা মূর্তি।
বিদেশী কাউকে গিফট 🎁 করার মত এর থেকে ভালো উপহার ভারতীয় এবং বাঙালি
হিসেবে আর কি কিছু হতে পারে!
অবশেষে এলো সেই দিন, যাত্রার দিন বাড়ির সবাইকে বলে🙋♀ ভগবানকে বলে
দুর্গা দুর্গা বলে বেরিয়ে পড়লাম লট বহর নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে।
রাস্তায় রাস্তায় পুজোর কেনাকাটার ভিড় উপচে পড়ছে, এমনকি হাইওয়েতেও
গাড়ি 🚖নড়ছে না ।
প্রচন্ড জ্যামে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হতে লাগলো, সারা রাস্তা এত প্রচন্ড
ট্রাফিক তমাল বলল যে মনে হয় ফ্লাইট টা আজ আর ধরা হবে না । এরপরে আর কোন
ফ্লাইট নেই রাত্রে দিল্লি যাওয়ার । ভগবানকে অনেক করে ডাকতে🙏 লাগলাম ।
তারপর অনেক চেষ্টা করে বোর্ডিং টাইমে ডিপারচার গেটে পৌঁছে গেলাম আমরা।
ডিপারচার গেটেও লম্বা লাইন। দমদম এয়ারপোর্টে আগেও পোষ্টেড 👮♀ছিলাম
আমি, ভাগ্যক্রমে পুরাণ কলিগদের সঙ্গে দেখাও হয়ে গেল। ওরাই সঙ্গে করে
বিনা লাইনে আমাদের ঢুকিয়ে দিল। এয়ারপোর্টের বাকি সব কাজ, চেকিং -টেকিং
ইত্যাদি কাজ সারার পর দুজনে ঊর্ধ্বশ্বাসে 🏃♀🏃♂দৌড়ালাম, যাতে দিল্লির
ফ্লাইট ✈ টা মিস না হয়ে যায় । আর যেহেতু আমরা আমাদের ব্যাগ 🧳আগে থেকেই
ঠিকঠাক ওজন করে নিয়ে এসেছিলাম তাই আমাদের এয়ারপোর্টে বিশেষ বেগ পেতে
হয়নি।
আমরাই ফ্লাইট এর শেষ প্যাসেঞ্জার ছিলাম। আমরা ফ্লাইটে চড়ার সাথে সাথে
গেট ক্লোজ হল। মনে মনে ভগবানকে থ্যাঙ্কস জানালাম🌹।
আমাদের ফ্লাইট দিল্লির মাটি যখন ছুঁল তখন রাত সাড়ে নটা। আর আমাদের
লন্ডনের জন্য ফ্লাইট ছিল পরদিন সকালবেলা ছটা দশে। তাই যথেষ্ট লম্বা সময়
আমরা দিল্লির এয়ারপোর্টে কাটালাম। মনে মনে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলাম, এত
লম্বা সময় লন্ডনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ভেবেই যেন অস্থির হয়ে
যাচ্ছিলাম আমি। কিন্তু কি আর করা যাবে; সময়ের আগে তো কিছুই করা যাবে না,
তাই অগত্যা অপেক্ষা করতেই হল।

এর মধ্যে দিল্লি এয়ারপোর্ট এর লাউঞ্জে গিয়ে রাত্রে ডিনারটাও 🍱সেরে
এলাম দুজনে। তারপর আমরা দুজনে চলে এলাম ইমিগ্রেশনের লাইনে। ইমিগ্রেশনে ও
কিছু আরো প্রশ্ন টশ্ন করল। তারপর ইমিগ্রেশন অফিসার স্ট্যাম্প লাগিয়ে
আমাদের যেতে বললেন এবং আমাদের সাথে বেশ ভাল ব্যবহার করেন ইমিগ্রেশন
অফিসার👮
অনেক লম্বা সময় কাটাতে হবে দিল্লি এয়ারপোর্টে তো কিছু তো একটা করতে
হবে, সেই জন্য দুজন মিলে ডিউটি ফ্রী সপের মাঝখানে চলে এলাম। সুন্দর
সুন্দর ঝাঁ চকচকে সব দোকান। কিছুদিন দিল্লি এয়ারপোর্টে আমি পোস্টেড
ছিলাম। তবে পোস্টেড স্টাফ আর প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
ঝাঁ চকচকে দোকান ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে বোর্ডিং গেটের দিকে এগিয়ে চললাম।
ফ্লাইট বোর্ডিংয়ের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সব ডকুমেন্টস এবং নিজের
রিটার্ন টিকিট দেখাতে তবেই বোর্ড হতে দিল ফ্লাইটে।
এবার সেই ফ্লাইট✈! স্বপ্নের যাত্রা বলে মনে হতে লাগলো। ফ্লাইট ক্রুদের
👩✈আমন্ত্রণ, ফ্লাইট এর নিরাপত্তা বোঝানো, সবই হয়ে যাবার পর এলো বালিশ,
ব্ল্যাঙ্কেট, চাদর, ও হেডফোন। সব ভালো করে গুছিয়ে মুভি দেখতে লাগলাম
সামনের পার্সোনাল ছোট স্ক্রিনে। ইতিমধ্যে হাতে চলে এসেছে ব্রেকফাস্ট এর
প্লেট🍱। ব্রেড 🍞বাটার🧈 জ্যাম 🍮ননভেজ কাটলেট 🥩জুস 🧃অমলেট🍳 পটেটো
ফ্রাই 🍟ফ্রুট সালাদ🥗 ইত্যাদি ইত্যাদি। এত এত খাবার ছিল যে আমরা পুরো
খাবার শেষই করতে পারিনি। আসলে বিদেশ যাত্রার উত্তেজনায় বোধহয় খিদেটা
কমে গিয়েছিল😀
শুধু মনে হচ্ছিল কেমন হবে নতুন দেশ! কেমন হবে লন্ডন! আমার প্রথমার হলেও
তমাল তো এর আগেও অনেকবার বিদেশ ঘুরে এসেছে, তাই আমার উত্তেজনা ছটফটানি
দেখে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে😃
পরে ও বলেছিল আমাকে নাকি টিনেজ বাচ্চাদের👩🦰 মতন লাগছিল, যখন কথা বলছিলাম
যখন উচ্ছ্বসিত হচ্ছিলাম। মনে মনে ও বেশ মজা পেয়েছে।
আমরা দিল্লি থেকে বাগদাদ হয়ে কৃষ্ণ সাগর পেরিয়ে আমস্টারডাম হয়ে
পৌঁছালাম লন্ডনের ✈ আকাশে, ঘড়িতে তখন বিকেল প্রায় সওয়া চারটে বাজে⏱।
ধীরে ধীরে লন্ডনের বাড়ি🏢 গাছপালা🌳 মাঠ দেখা গেল।
আমরা ল্যান্ড করলাম প্রায় ৪:২৫ এ। অনেক লম্বা জার্নী পেরিয়ে এলাম আমরা।
এরপর অনেকটা লম্বা পথ হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করে পৌঁছালাম
ইমিগ্রেশনে। অনেকগুলো পর্যায় অতিক্রম করে ভালোভাবে ডকুমেন্টস দেখিয়ে
আমাদের ব্যাগ🧳 নিতে নিতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেল।
এরপর এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি🚕 নেওয়ার পালা। আমরা একটা ক্যাব
বুক করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা কল এলো ক্যাব ড্রাইভারের।
-হ্যালো হাউ আর ইউ কথা বলতে বলতেই ক্যাবটা পৌঁছে গেল আমাদের সামনে এবং
ক্যাব ড্রাইভার হাসিমুখে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে
বলল,
-হাউ ইজ ইওর জার্নি
ভালোভাবে আমাদের মালপত্র এবং আমাদেরকে গাড়িতে বসিয়ে আমাদের
গন্তব্যস্থলে ৭৬ থ্রনটন গার্ডেন-এর দিকে যাত্রা শুরু করল।
হিথ্রো এয়ারপোর্ট টা বেশ পুরানো গোছের, খুব একটা ঝাঁ চকচকে নয়। এর
তুলনায় আমাদের ইন্ডিয়ান এয়ারপোর্ট অনেক সুন্দর ঝাঁ চকচকে এবং বেশ
গুছানো ও বটে।

রাস্তার দুদিকে প্রশস্ত সবুজ উদ্যান 🌲🌳গাছপালা ভরা। প্রথমটা বেশ ফাঁকা
ফাঁকা রাস্তা, এরপর অল্প বসতি 🏘পেরিয়ে গাড়িটা এগিয়ে চলল। কখন যে চোখটা
লেগে এসেছিল বুঝতে পারিনি, তমালের ডাকে ঘুম ভাঙলো একেবারে হোম স্টে-র
সামনে🏠। একটা দোতালা সাদা বাড়ি। এই এলাকার সমস্ত বাড়ি এমন সাদা আর লাল
মাথা চিমনি ওয়ালা বাড়ি🏠।
অনেক ডাকাডাকি হাঁকাহাকি এবং কলিং বেল বাজানোর পরেও কেউ এলো না দেখে আমরা
নিজেরাই দরজা খোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দরজা খুলল না। এরপর যেখানে আমরা
বুক করেছিলাম সেখানে তমাল আবার কল করলো। কল করতে ওরা একটা পিন পাঠালো।
এবং দরজার হাতলে সেই পিনটা লাগানোর সাথে সাথে দরজাটা খুলে গেল আর আমরা
ভেতরে প্রবেশ করলাম । এর কিছুক্ষণ পরে একটি কৃষ্ণাঙ্গ লোক আমাদের সামনে
এসে স্মিত হাসি মুখে দাঁড়ালো এবং জানালো যে সে এই হোম স্টে-র
কেয়ারটেকার।
আমাদের রুমটা দোতলার ডানদিকের রুম। আমাদের রুমটা বেশ ছিমছম গোছানো ছিল।
ছোট একটা সোফা সেট🛋, সেন্টার টেবিল, তাজা ফুল 🌷🌻🌹সহ একটা সুন্দর
ফ্লাওয়ার ভাস, মেঝেতে নরম উলের একটা কার্পেট বিছানো, নিচু বিছানা🛏, দুটো
চেয়ার🪑🪑 একটা ছোট টেবিল, ওয়াল হ্যাংগিং 🖼দুটো বড় বড় আলমারি আর রুম
হিটার ও লাগানো ছিল। রুমে বেশ বড় বড় জানালাও🪟 ছিল। রুমের সাথেই
লাগোয়া বেশ বড় অ্যাটাচ বাথরুমে গিজার 🚽🧻বাথটাব🛁 শাওয়ার 🚿সবকিছুই
🧼🧴বেশ ঝাঁ চকচকে।
কিচেনে গিয়ে আমি তো অবাক! সমস্ত জিনিস পরিপাটি করে থরে থরে সাজানো! কি
নেই সেখানে? মাইক্রোওভেন, ইন্ডাকশন, রেফ্রিজারেটর, কুকার, কড়াই,
ডিসওয়াশার মেশিন, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, ডিনার সেট এবং আরো অন্যান্য
জিনিসে ভরা। আমি তো খুবই বোকা বনে গেলাম। তার কারণ আমরা সবকিছু ইন্ডিয়া
থেকে বয়ে নিয়ে এসেছিলাম।
কিচেন এর পেছনেই বেড়া দিয়ে ঘেরা একটা ছোট্ট বাগান সবুজ 🌱🌿☘🍀ঘাসে
ঢাকা। সামনে খোলা আকাশ নিচে সোফা সেট🛋, কাঁচের টেবিল এবং এসট্রে রাখা
ছিল।
যাইহোক সব দেখে শুনে রুমে এসে ফ্রেশ🚰 হয়ে ড্রেস চেঞ্জ 👚👖করে আমরা
একটু বেরোলাম সান্ধ্য 🌃ভ্রমণে, আর পায়ে হেঁটে 🚶♀🚶♂একটু আশপাশটা ও
দেখতে গেলাম। শান্ত নিরিবিলি শহর এদিকটায়। হোটেলের ঠিক সামনেই চৌমাথা,
চৌমাথার সামনের দিকটা চলে যাচ্ছে কিংস অ্যাভিনিউ- এর দিকে, বাঁ দিকটা
বালহাম ডান দিক স্ট্রিথম হিল এবং পিছন দিক থ্রনটন গার্ডেন, যার একদিকে
ধরে আমরা হেঁটে 🚶♀🚶♂এগিয়ে চললাম। এটা সেই সিন্ধু সভ্যতার শহরের
নকশার মতো। প্রত্যেকটা বাড়ির দুদিকেই পাকা রাস্তা আর সামনের দিকে
মেনরোড। কোন বাড়িই পাড়ার ভিতর বলে কিছু নেই, সবই রাস্তার সামনে একেবারে
এবং সবই বাড়ি একই লাইনে। সমস্ত বাড়িই রাজপথে উন্মুক্ত প্রত্যেক বাড়ির
সামনে এক চিলতে ছোট বাগান ঘাসে🪴🪴 ঢাকা, পাঁচিলের গা ঘেঁষে উঠেছে
বিভিন্ন ফুলের🌷🌹🌻 গাছ। উজ্জ্বল রঙ বেরঙের ফুলে ভরা। যদিও সব বাড়ির
দরজা বন্ধ, কোন লোকই দেখা যায় না।
ক্রমশ.......
আলোকচিত্র সৌজন্যে লেখিকা অদিতি মন্ডল