চরম-সত্য
শুভজিৎ মুখার্জি,
কলকাতা
শৈশব ও কৈশোর উপান্তে,
ধীরে ধীরে লভি যৌবন --
আসলে তা ছিল অনুভূতি প্রান্তে,
মহাশীর্বাদ -- বিবশিত মম তনুমন।
ভালবাসা বলে কিছু হয় না !
আসলে তা শুধু অলীক, শরিরী মায়া --
জীবনান্তে কিছু বেঁচে রয় না,
'ভাললাগা' শুধু ঘিরে থাকে কায়া।
অলক্ষ্যে জীবন সদা নিয়োজিত হয়,
ভালো থাকার চেষ্টায়, বাকী সব ব্রাত্য !
সকলি মিথ্যা এ জগতে, অজ্ঞান - অভিনয়,
শুধু এই অনুভূতিটুকু চরম সত্য !
এই দেহতো আসলে এক মন্দির --
অন্তরাত্মা যেথা অধিষ্ঠিত ঈশ্বর !
কে কাকে, কিভাবে, পূজিবে স্হবির ;
মহামায়া কোলে, মহাকাল হয় নশ্বর !
বিরহিনী
শুভজিৎ মুখার্জি,
কলকাতা
রাধা, একদা বিরলে, বসে তরুতলে,
প্রেমেতে আত্মহারা
তাঁর, ধূলি মাখা বেশ, আলুথালু কেশ,
নয়নে অঝোর ধারা।
তথা, দিবাকর গত, সন্ধ্যা আগত,
আকাশে ফুটিছে তারা ;
গোপী, যমুনা সকাশে, জল নিয়ে আসে,
কাঁখেতে কলস ভরা।
সে যে, হেনকালে দেখে, গায়ে ধুলা মেখে
শ্রীরাধা কাঁদিছে বসে;
তাই, কাছেতে আসিয়া, পাশেতে বসিয়া,
শুধাইল অবশেষে,
"রাধা, বলরে আমায়, কে তোরে কাঁদায়,
মজিলি কিসেরই বশে ?"
রাধা, কাঁদিয়া কহিল, "কি জানি কি হল
মজিনু প্রেমেরই রসে।
সখী, শুধাবি না আর, কেন যে আমার",
বাঁধ ভাঙ্গা এই আঁখি --
আমি, তাঁহার লাগিয়া, কাঁদিয়া কাঁদিয়া
শরমেতে মুখ ঢাকি।
আমি, যত স্মৃতি তাঁর, খুঁজিয়া আমার
অন্তরে ভরে রাখি ;
আমি, ভুলিয়া সকলি কেন যে কেবলি
পথ রজঃ গায়ে মাখি !
সখী, শুধাবি না আর, কেন যে আমার
মন এত অভিমানী ---
কভু, হাসিয়া কাঁদিয়া বিনুনী মেলিয়া
সে ধুলা কুড়ায়ে আনি
যেথা, রয়েছে সাজানো, এ হিয়া মজানো
চরণচিহ্নখানি ;
ধুলা, অঙ্গে লাগাই, কৃষ্ণ-কানাই
পরশ তাহাতে মানি।
সখী, শুধাবি না আর, কেন যে আমার
কেশরাশি আজি খোলা !
মোর, কবরীর ভার, সহিছে না আর
শুকালো ফুলের মালা।
ওসে, কবেকার কথা, হাদয়ের ব্যথা
শুনিতে পায় না কালা !
কবে, বঁধুয়া আসিয়া, মধুর হাসিয়া,
হরিবে বিরহ জ্বালা ?"
তাই, এত বলি রাধা, থামাইল কাঁদা,
উঠিয়া দাঁড়ালো ধীরে
সে যে, কৃষ্ণ-বিরহিণী, কৃষ্ণের সঙ্গিনী
চলিল যমুনা তীরে।
সে যে, বোঝেনি এখনও, বুঝিবে কখনও,
যে কঠিন কথাটিরে,
সেটি, "প্রেমের কমল, বিরহ অনলে
ফুটে থাকে চিরতরে"।।