বিশ্বের ভয়ংকরতম স্থান
অরুন্ধতী পুরকাইত,
পোর্ট ব্লেয়ার, আন্দামান
ভ্রমণের সার্থকতা কি শুধুই প্রকৃতির শোভা উপভোগ করার মধ্যে? অনেকের কাছেই
বিষয়টা তেমন নয়। ভ্রমণ মানেই জড়িয়ে থাকে একটা অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। আর
সেই টানেই পৃথিবীর ভয়ংকর সব জায়গায় ভিড় জমাতে যান বহু মানুষ। রইল তেমনই
কিছু জায়গার তালিকা।
* ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক, আমেরিকা – ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাডার
সীমান্তে অবস্থিত এই উপত্যকা উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে নিচু অঞ্চল। তবে শুধু
এটুকুতেই তার পরিচয় শেষ হয়ে যায় না। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ
দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এখানে। বলা ভালো আত্মহত্যা করেছেন। এই উপত্যকা
সম্বন্ধে শোনা যায়, পাথরের সারি নাকি নিজে নিজেই জায়গা বদল করে। বালির
মধ্যে অপরিচিত কান্নার শব্দও শোনা যায়। আবার অনেকের মতে প্রবল গরমে
মানুষের মাথার ঠিক থাকে না। তাই এমন অদ্ভুত ঘটনা কল্পনা করেন। তবে
ব্যাখ্যা যাই হোক, অজানা বিপদের মুখোমুখি দাঁড়াতে বহু মানুষই ভিড় জমান
প্রতি বছর।
* ভলক্যানো ন্যাশনাল পার্ক, হাওয়াই – ১৯৮৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সমানে
লাভা উদ্গীরণ করে চলেছে হাওয়াই দ্বীপের কিলাউয়া। আর একমাত্র এখানেই সেই
দৃশ্য মানুষ দেখতে পান চোখের সামনে থেকে। শুধু তাই নয়, চাইলে তরল লাভার
উপর দিয়ে নৌকো চালিয়ে ঘুরেও আসতে পারেন। তবে একটাই শর্ত। আপনার মৃত্যু
হলে কেই তার দায়িত্ব নেবে না। এই অ্যাডভেঞ্চারের জন্য গত ৩৮ বছরে কম জীবন
তো হারিয়ে যায়নি।
* স্নেক আইল্যান্ড, ব্রাজিল – রাজধানী সাও পাওলো শহরের অদূরেই রয়েছে এই
দ্বীপ। সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সাপের ঘনত্ব এখানে। আর প্রতিটাই
মারাত্মক বিষাক্ত। বলা হয়, এই দ্বীপে এক বর্গমিটারের মধ্যে ৫টি করে বিষধর
সাপ থাকে। আর তাদের বিষে নাকি মানুষের মাংস পর্যন্ত পুড়ে যায়। একাধিক
বিপদের ঘটনা ঘটায় এবং সাপের বিষের কালোবাজারি রুখতে বেশ কয়েক দশক ধরেই
কারোর প্রবেশাধিকার নেই স্নেক আইল্যান্ডে।
* লেক নেট্রন, তাঞ্জানিয়া – তাঞ্জানিয়ার রহস্যময় হ্রদ লেক নেট্রন। ১৯৫০
সাল থেকেই তা রহস্যময় গোলাপি রঙের জন্য পরিচিত ছিল। ২০১৩ সালে আবিষ্কার
হয় আরও এক অবিশ্বাস্য চরিত্র। লেক নেট্রনের জল স্পর্শ করলেই নাকি যে কোনো
জীবন্ত প্রাণী পাথর হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের মতে অবশ্য বিষয়টা পুরোপুরি
সত্যি নয়। জলের ক্ষরতা অনেক বেশি হওয়ার কারণেই জীবিত কোষ পুড়ে যায়। ফলে
তা ভয়ঙ্কর, এতে সন্দেহ নেই। বলা বাহুল্য, হ্রদের জলের এই চরিত্র জানার
পরেই পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ।
* অয়িমিয়াকন, সাইবেরিয়া – পৃথিবীর শীতলতম গ্রাম অয়িমিয়াকন। রাশিয়ার
উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই গ্রামটির তাপমাত্রা কখনও কখনও -৭০ ডিগ্রি
সেলসিয়াসের নিচেও নেমে যায়। যদিও বেশ কয়েকঘর যাযাবর মাঝে মাঝেই আস্তানা
গাড়েন এখানে। তবে এই ঠাণ্ডায় মানুষের টিকে থাকা রীতিমতো আশ্চর্যের। আর
তাই হয়তো বহু মানুষ শুধু নিজেদের ক্ষমতা পরীক্ষা করতেই প্রতি বছর ভিড়
জমান এই গ্রামে।
* স্কেলিটন কোস্ট, নামিবিয়া – আফ্রিকা মহাদেশের একেবারে দক্ষিণে এই
সমুদ্র উপকূলটি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য কঙ্কাল। মানুষের কঙ্কাল যেমন
রয়েছে, তেমনই রয়েছে অন্য বিভিন্ন স্তন্যপায়ী পশুর কঙ্কালও। অনেকের ধারণা,
বহু প্রাচীন কাল থেকেই আফ্রিকার মানুষ বলি দেওয়ার পর পশুর দেহ ভাসিয়ে দিত
সমুদ্রে। আর তাছাড়া আটল্যান্টিক মহাসাগরের বুকে জাহাজডুবির ঘটনাও তো কম
ঘটেনি। সমুদ্রের স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে সেইসব কঙ্কাল এসে জমা হয়েছে
নামিবিয়ার উপকূলে। তবে এমন একটা দৃশ্য সত্যিই ভয় পাইয়ে দেয়।
* গেটস অফ হেল, তুর্কমেনিস্তান – নামের সঙ্গে জায়গাটির চরিত্রের অদ্ভুত
মিল। ঠিক যেন অন্ধকারে জ্ব্লছে চুরাশিটা আগুনের কুণ্ড। আর তাও প্রায় ৫০
বছর ধরে। দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা জমার ফলে জায়গাটি মিথেনে ভরে উঠেছিল।
বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, মিথেন জ্বালিয়ে দিতে পারলেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া
যাবে। কিন্তু সেই মিথেন গ্যাস এখনও জ্বলছে। বিজ্ঞানীদের কাছে এ এক রহস্য।
আর পর্যটকদের কাছে এক বিরল অভিজ্ঞতা।
* নর্থ সেন্টিনাল, আন্দামান – আন্দামানের নর্থ সেন্টিনাল দ্বীপের আতঙ্ক
কিন্তু প্রকৃতি নয়। বরং এখানকার মানুষ। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের বহু
উপজাতির সঙ্গেই সভ্য মানুষের যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়েছে। কিন্তু নর্থ
সেন্টিনালের দ্বীপের উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষরা কিছুতেই সভ্য মানুষের
সংস্পর্শে আসতে চান না। কোনোভাবে সেখানে সভ্য মানুষ ঢুকে পড়লে, তাঁদের
সেখানেই বিষাক্ত তীরের আঘাতে মৃত্যু বরণ করতে হয়। তবে একসময় বহু মানুষই
সেন্টিনালদের মন জয়ের আশা নিয়ে সেখানে পা রেখেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি
সামাল দিতে বিশেষজ্ঞ ছাড়া কারোর প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার।