ঘরের মায়া
সুস্মিতা ভান্ডারী কর,
কুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
খুব অদ্ভুত ব্যাপার হল জীবনের ২০ থেকে ২৪ টা বছর আমি যে বাড়িতে
কাটিয়েছি সে বাড়িতে এখন গেলে জিজ্ঞাস করতে হয় যাব কিনা...
সেই বাড়িতেই আমি বেড়াতে আসি ,সে বাড়ি থেকে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে
যেতে হয়। যাওয়ার আগে কয়েকবার দেখে নিতে হয় কিছু ফেলে যাচ্ছি না তো...
আর ওই যে আমার সাধের ঘরটা এভাবেই ফেলে যায় আমি এই ঘরের পর্দা এই ঘরের
বিছানা আলমারি ড্রেসিং টেবিল সব আমার খুব কাছের। এই ঘরে এলে আমি চেনা
গন্ধ পাই। প্রতিটা কোন আমার আল্লাদে আটখানা হয়ে আছে। আগে আমি গুছাতাম না
এখন এসে দেখি মা পরিপাটি করে গুছিয়ে ঘর বন্ধ করে দিয়েছে, না হলে কেউ
এসে ঢুকে এলোমেলো করে দিতে পারে এজন্য।
কত রাত জেগে কাটিয়েছি বান্ধবীদের সাথে সাক্ষী এই ঘর। আমার কত কান্না কত
অভিমান কত রাগ দেখেছে এই ঘর। মন ভাঙ্গা রাতে ঘরে জানালায় বসে আকাশ
দেখেছি সারারাত, কত ছুটির দুপুরে শালিক পাখির মত ঝগড়া করেছি মায়ের
সাথে।
স্কুল থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছি এই ঘরে। নিশ্চিন্তে
ঘুমিয়েছি মা কখনো রাগ করেনি সব সাক্ষী এই ঘর। সারাদিন ঘুরে এসে অন্ধকার
ঘরে পরম শান্তিতে পছন্দের গান শুনেছি, কতবার কত জিনিস লুকিয়েছি খাটের
কর্নারে তোষকের নিচে, ঐ আলনা অগোছালো করেছি শতবার শুধুমাত্র একটা জামা
পাচ্ছিলাম না তাই। আবার একদিকে শাড়ি এক দিকে সালোয়ার একদিকে কুর্তা পাট
করে সাজিয়েছি।
অবাক করা বিষয় হলো এখন যে ব্যাগে কাপড় নিয়ে আসি ওই ব্যাগটা সোফার এক
কর্নারে পড়ে থাকে যেভাবে নিয়ে আসি সেইভাবে নিয়ে যাই। ভাবি দু চার দিনই
তো থাকবো আর আলমারিতে রাখবো না। ব্যাস আলমারিটা আর খোলাও হয় না। কত
জিনিস কানের দুলের রঙিন বাক্স সবই পড়ে থাকে একটু হাত দিয়ে দেখি মাকে
জিজ্ঞাসা করি এটা কবে কিনলে ওইটা কবে আনলে এই চাদরটা কি নতুন এই জিনিস
গুলো কখন কিনলে?
যখন যাওয়ার সময় বর নিতে আসে তখন মা জিজ্ঞাসা করে আবার কতদিন পর বাড়ি
আসবি?
আমি চুপ চাপ ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাই, জবাব দেওয়ার মতো কিছুই থাকেনা।
হ্যাঁ আমিও জানি ওই বাড়িতে আমারও একটা ঘর আছে মা বাবা আছে সবাই আমার
জন্য অপেক্ষা করছে বাড়িতে তাও এই ঘরের মায়া কাটে না প্রতিবার যাওয়ার
সময় পিছন ফিরে তাকাতে পারি না,
কেন এমনটা হয়?
প্রতিটা মেয়েরি কি এমন হয়?