পুর ভরা উচ্ছে (করেলে কা ভরবা)

বাপ্পাদিত্য গুড়িয়া,

নতুন দিল্লি

উচ্ছে বা করলার নাম শুনলে অনেকেরই মুখটা বেঁকে যায়, তবে উচ্ছে খুবই উপকারী একটি সবজি। ব্যক্তিগত ভাবে উচ্ছে আমার খুবই পছন্দের একটি সব্জি। তার উপর আবার ডায়াবেটিক রোগী হওয়ার দরুন আমাকে প্রায় প্রতিদিনই করলা খেতে হয়। রোজ রোজ কি আর উচ্ছের রস, উচ্ছে ভাজা, উচ্ছে সিদ্ধ অথবা শুক্তো খেতে ভালো লাগে? দিল্লীতে বসবাস করি, আসে পাসে নানান প্রদেশের লোকের বাস। তো একদিন বউ কে বললাম, রোজ রোজ একই রকম রেসিপি না বানিয়ে একটু অন্য রকম কিছু বানাওনা? একদিন পাঞ্জাবি স্টাইলের করেলে কা ভরবা করে খাওয়াও না........ জবাবে বউ বললো, আমি খাঁটি বাঙালি তাই রস, সিদ্ধ, ভাজা বা শুক্তো ছাড়া অন্য কিছু পারিনা। আমি বললাম, রেসিপিটা তোময় বলে দিচ্ছি বানিয়ে খাওয়াও প্লিজ। শুনেই বউ একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল, বললে রেসিপি টা আমায় না বলে এক আধ দিন নিজেও তো কিছু বানাতে পার.......... এর পর কোনো কথা না বলে বিকেলের দিকে বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে চুপচাপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম, আর মনে মনে বললাম - রোজ রেঁধে খাওয়ায় বলে কথা শোনালে, আমি ও আজ রেঁধে দেখিয়ে দেব যে আমি ও কম যাই না।

খুব খুঁটিয়ে দেখে দেখে সবকিছু কিনলাম বাজার থেকে। বাড়ির কিছুই ব্যবহার করবনা। আসলে রান্নাঘরে তো ঢুকিনা, তাই কোথায় কি আছে না আছে জানা নেই। মশলা পাতি বা অন্যান্য কোন জিনিসের দরকার পড়লে সেই বউ-এর শরনাপন্ন হতে হব, আমি কারো সাহায্য ছাড়াই একা একাই বানাবো ভেবেই কড়াই আর ছান্তা ছাড়া বাকি টুকিটাকি সব বাজার থেকে নিয়ে এসেছি। বাকি অল্প কিছু সাহায্য করতে আমার মেয়েই যথেষ্ট। যাইহোক বকবক করে সময় নষ্ট না করে চলুন তবে ঝটপট বানিয়ে ফেলি টেস্টি মজাদার 'পুর ভরা উচ্ছে' বা 'করেলে কা ভরবা'।


সামগ্রী:-

একটূ ছোট সাইজের মোটা বা গোল উচ্ছে 250 গ্রাম
মাঝারি সাইজের আলু ১ টি
লঙ্কার গুঁড়ো - এক চা চামচ
ভাজা জিরে গুঁড়ো - এক এক চা চামচ
লবণ - স্বাদ অনুসারে
আমচূর পাউডার - ১ টেবিল চামচ
ধনে গুঁড়ো - ১ চা চামচ
রোস্টেড বাদাম কুচি - ১ টেবিল চামচ
ফোড়নের জন্য গোটা জিরে - ১/৪ চা চামচ
এক চুটকি হিং
বেসন - দু'চামচ
ভাজার জন্য তেল


প্রণালী:-

আলুটা পরিষ্কার করে ধুয়ে সিদ্ধ বসিয়ে দিলাম।

উচ্ছে গুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে পরিষ্কার কোন শুকনো কাপড়ে মুছে নিয়ে একটা থালা আর চাকু নিয়ে বসলাম পরিষ্কার করার জন্য।

উচ্ছে গুলো মাঝ বরাবর কেটে নিয়ে ছুরির আগা দিয়ে অথবা চা চামচের পেছন দিয়ে ভেতরের সমস্ত বীজ এবং শাঁস বের করে নেব। ভেতরের বীজ যদি পাকা থাকে তাহলে পাকা বীজগুলো ফেলে দিতে হবে আর বীজ যদি কচি হয় তাহলে বীজ এবং শাঁস গুলো রেখে দিতে হবে পরে ওগুলো কাজে লাগবে।

সব উচ্ছে গুলো পরিষ্কার করা হয়ে গেলে উচ্ছের ভিতর অল্প অল্প করে লবণ ছিটিয়ে দিতে হবে।

এরপর সিদ্ধ করে রাখা আলু আর বাকি সমস্ত উপকরণ গুলোকে একসাথে ভালো করে মেখে দিতে হবে।

এইবারে কড়াইতে অল্প তেল গরম করে তার মধ্যে জিরে আর হিং ফোড়ন দিয়ে বীজ এবং শাঁসটা ভালো করে নেড়েচেড়ে নেব তারপর তাতে মেখে রাখা আলু তুলে দিয়ে আরো একটু ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে আঁচ নিভিয়ে একসাইটে রেখে দেবো হালকা ঠান্ডা হওয়ার জন্য।

উচ্ছের ভিতর ভরার জন্য আমাদের পুর এখন রেডি। এবার তৈরি হয়ে যাওয়া পুরটা কড়াই থেকে একটা পাত্রে নামিয়ে নিয়ে কড়াই টিকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে আবারও একবার উনানে চাপিয়ে দেবো।

করাই গরম হলে করাইতে ভাজার মতন পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল দিয়ে গরম হওয়ার জন্য রেখে দেবো আর সেই সাথে চলুন আমরা উচ্ছের ভেতরে পুর ভরে নিই।

হাতে অল্প করে তেল মেখে নিয়ে পাত্র থেকে অল্প পুর হাতের মধ্যে নিয়ে হাতের চাপ দিয়ে একটু লম্বা শেপ করে নিয়ে উচ্ছের ভিতরে খুব ভালো করে ঠুসে ভরে দেব। এরপর একটা পাত্রে দু চামচ বেসন একটু গাঢ় করে গুলে নিয়ে উচ্ছের মুখটাকে সিল করে দেব। এই সিল করার ব্যাপারে অনেকেই সুতো ব্যবহার করেন কিন্তু খাবারের সময়ে বড় অসুবিধা করার জন্য আমার বেসন দিয়ে সিল করাটা বেশি পছন্দ।

দেখছেন আপনাদের সাথে গল্প করতে করতে সবগুলো উচ্ছের ভেতরে পুর ভরে মুখটা আবার সিল করে নিয়েছি, আর এদিকে আমাদের মধ্যম আঁচে রাখা কড়াই এর তেল ও গরম হয়ে উঠেছে।

এবার আস্তে আস্তে সব উচ্ছে গুলোকে তেলের মধ্যে নামিয়ে দেব এবং দু চার মিনিট পরে পরে ভালো করে ব্রাউন হওয়া পর্যন্ত উল্টে পাল্টে ভেজে নেব।

আসুন এবার পরিবেশনের পালা, গরম গরম পুর ভরা উচ্ছে বা করেলে কা ভরবা-র সাথ রুটি অথবা পরোটা, ধনিয়া পুদিনার গ্রিন চাটনি আর সালাদের সাথে রাতের ডিনারটা জাস্ট জমে যাবে।

আমি তো বানিয়ে খেলাম এবং খাওয়ালাম সবাইকে, এবার আপনাদের পালা...........

সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং রোজ রোজ একঘেয়ে খাবার না খেয়ে একটু স্বাদের পরিবর্তন আনুন। দেখবেন জীবন অনেক সহজ এবং সুন্দর হয়ে গেছে।

-ধন্যবাদ