Mio- Amore

সীমন্তিনী,

আসাম

কে বলে ভালবাসাকে ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতেই হবে ?

মাত্র আড়াই দিনের বন্ধুত্ব টম আর আমানের । সেদিন সন্ধ্যার সময় যখন হোটেলের প্রবেশ দরজার সামনে আমানরা নামল গাড়ি থেকে , তখনই হঠাৎ দেখা টমের সাথে , অবশ্য তখন ও আমান জানে না যে ওই বন্ধুটার নাম টম । পরে জেনেছে হোটেলে কর্মরত আঙ্কেলদের কাছে । টম যে কেক খেতে বড় ভালবাসে দেখল আমান , দুটো বিস্কুট আর একটা কেক যখন সে এগিয়ে দিল টমের দিকে টম বিস্কুটের দিকে ফিরেও তাকাল না গোগ্রাসে খেল কেকটা । তারপর আবার আমানের দিকে তাকাল । মুখে না বলতে পারলেও তার চোখের ভাষা বড়ই স্পষ্ট । তাই তো আমানও পারে অনায়াসে তার মনের কথা বুঝতে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই । সে তার নিজের ভাগের কেকটা তাই বাড়িয়ে দিল টমের দিকে । টম চোখ তুলে আমানকে দেখল একবার ; তারপর পরম সন্তুষ্টি নিয়ে খেল কেকের টুকরোটা । আমান তখন তার বন্ধুকে নিয়ে বল ছুঁড়ে ছুঁড়ে খেলছে । বাবা মা হোটেলের ভিতর রুম দেখতে ব্যস্ত ছিল এতক্ষণ । মায়ের ডাক শুনে আমান পা বাড়াল ভিতরের দিকে । দৌড়ে এল টম , আমানের গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়াল , একটা হাত তুলে দিল আমানের হাতের উপর । " ওমা ! তুই হ্যান্ডসেক করতে পারিস ? কি ভাল রে তুই টম । " আমানের গলায় বিস্ময় । টম মুখ তুলে তাকিয়ে থাকল আমানের দিকে । চোখ দুটো আহ্লাদে চিক চিক্ করছে । আমান টমকে একটু আদর করে দৌড়ে গেল হোটেলের ভিতর । হাত মুখ ধুয়ে একটু বসতে না বসতেই হোটেলে এক কাকু কিছু টিফিন দিয়ে গেল রুমে । খেয়ে দেয়ে পাশের রুম থেকে বন্ধুকে ডেকে নিয়ে আবার গেল নীচের গাড়ি বারান্দায় । টম এর মধ্যেই আমানকে বেশ চিনে ফেলেছে , ও কে দেখতেই দৌড়ে এল কাছে । আমান আর তার বণ্ধু সনু ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত তখন । হঠাৎ বল গিয়ে পরে পাঁচিল ডিঙ্গিয়ে বাইরে । কিন্তু সন্ধ্যা শেষ করে এখন রাত । অন্ধকারে অজানা জায়গায় বল খুঁজতে যেতে ভয় করছে তাদের । হঠাৎ টম দৌড়ে চলে যায় বাইরে । ঠিক খুঁজে এনে দেয় বলটা । বলটা এনে আমানের পায়ের কাছে ফেলে দেয় । আমান তো বেজায় খুশি । আদর করে দেয় টমকে বেশ করে ; টম চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে ; মাঝে মাঝে হ্যান্ডসেক করে নেয় আমানের সাথে ।

পরের দুটো দিনও বেড়াতে যাবার আগে এবং বেড়িয়ে এসে আমান নিজের হাতে টমকে খেতে দেয়। বেশ কিছু সময় খেলা করে দুটো অসম বন্ধু মনের আনন্দে । আজ বিদায় নেবে আমান হোটেল থেকে । যাওয়ার আগে টমকে কেক দেয় খেতে । কি যে বোঝে ওই মূক টম কে জানে ? খাবারের দিকে তার দৃষ্টি নেই ; বার বার তার সামনের দুটো হাত বাড়িয়ে দেয় আমানের দিকে ; মুখটা ঘষতে থাকে আমানের জুতোর উপর , চোখের কোনে চিক চিক্ করে জল । পশু কি সত্যিই কাঁদে ? কি জানি ! তবে বেশ কিছু রাস্তা আমান কেঁদেছে । তার পাপা যখন তাকে বলে গরমের ছুটিতে বরফের দেশে বেড়াতে নিয়ে যাবে তখন সে জোড় গলায় বলে " না পাপা বরফ দরকার নেই আবার আমরা এই হোটেলেই বেড়াতে আসব , এবার টমির জন্য mio - amore থেকে কেক আনব । mio- amore মানেই যে my love ; টমকেও আমি যে ভালবাসি । বল পাপা ? "