প্রেম ও প্রকৃতি

কুলিক,

কলকাতা

গোড়ার কথা : আজ থেকে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগে, গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তর দশকে, 'স্বর্গত মলিন মুখার্জি'-র স্বহস্তে লেখা একটি গানের খাতা ( পাণ্ডুলিপি ) সম্প্রতি উদ্ধার হয়েছে, যাতে রয়েছে মোট ৪০১ টি গান। এর মধ্যে মোট ৬১ টি গান 'প্রেম ও প্রকৃতি' বিষয়ক। ক্রমিক সংখ্যায় উল্লিখিত দুটি সংখ্যার মধ্যে প্রথমটি মূল পান্ডুলিপির ক্রম এবং দ্বিতীয়টি আমার দেওয়া এই সংকলনের ক্রম।


২/১ => সারা রাতি ধরে --

সারা রাতি ধরে --
ধ্রুব তারা একা জ্বলে।
ভ্রান্ত পথিকেরে সে যে
দেয় পথ বলে।।

দেখায়ে প্রেমের আলো,
পায় সে ব্যথার কালো,
কেহ বা বোঝে না -- কেহবা বুঝিয়া,
নয়ন ভরায় জলে।।
মরমেতে তার যে মিনতি কাঁদে --
জানি সে মি মিনতি বুঝিবেনা কভু চাঁদে,

নিখিল বেদন রাতে --
ধ্রুব তারা জ্বলে সাথে,
সম বেদনায় -- শান্ত্বনা দেয় --
দহন জ্বালায় ভুলে।।
___________

১৩/২ => নীল আকাশে চাঁদের পাশে --

নীল আকাশে চাঁদের পাশে --
আমার পাগল মন সেথায় সর্বক্ষণ
ফিরবে না সে আর ফিরবে না ঘরে
স্বপন রচে কত তাহার তরে
তাহার তরে......

সে
সকাল বেলা খেলে চড়ে মেঘের ভেলা
সাঁঝের বেলা পরে যত তারার মালা
সূর্যি মামা ডাকে দুপুরবেলা
সোহাগ ঝরায় নিশা বিন্দু শিশিরে

রামধনুকের দেশে
উদাসী মন আমার মধু রাতে সেথা
বেড়ায় ভেসে

ভাবনা নাহি তার নাইকো ঘরের টান
সকালের থেমে গেছে তাহার খুশির গান
অকালে ঝরে লাজে শপথের মালা
পায়না খুঁজে সে মালা দেবে কারে
___________

২২/৩ => প্রজাপতি কাঁপায় রঙিন পাখা

প্রজাপতি কাঁপায় রঙিন পাখা
আর মলয়া দোলায় বকুল শাখা

ঢল ঢল যৌবনেরে
নীলাম্বরী রাখে ঘিরে
আমি রাঙিয়ে দিয়ে তোমার সিঁথি
পড়াই হাতে শাঁখা

কাজল মাখা দীঘল চোখে
নীরব ভাষায় জানাও সোহাগ
আশা নিয়ে বুকে

কুমকুম টিপ পরি ভালে
অঙ্গে নানা ছন্দ তুলে
তুমি জড়িয়ে দাও আমার হিয়া
সেও স্বপন মাখা
___________

২৩/৪ => বকুল কাঁদিয়া বলে আমায় দলোনা

বকুল কাঁদিয়া বলে আমায় দলোনা
ফাগুন গিয়াছে চুমে, তাইতো লুটাই ভূমে
অনাদরে দূরে ফেলে দিয়োনা

হিয়া তো ভোলেনি প্রেমেরি ছন্দ
মরমে রয়েছে কতই গন্ধ
কোকিলা গাহিছে আবেশে শাখাতে
আমি যে গো বিরহিনী ললনা

আমিও ছিলাম মনো হরিণী
গাঁথিয়া যতনে প্রেম অনুরাগে
পিরিত গলে কত চঞ্চলিনী
এখনো রাখি গো বুকেতে মধু
এলোনা তবুও ভ্রমরা বধু
তোমার চরণে মিনতি জানাই
তুমি মোরে তুলে লওনা
___________

২৪/৫ => ও বাঁশের বাঁশি

ও বাঁশের বাঁশি
ও তুই প্রেমের সুরে বেজে
পরাস প্রেমের ফাঁসি

সোহাগ ঝরাস যখন সুরে
মন যে তখন কেমন করে
অঙ্গে অঙ্গে কত ভাব যে লাগে
দেখে চাঁদের হাসি

তারার মালায় আকাশ সাজে
ব্যাকুল হৃদয় মোর বাঁশি শুনে
কারে খুঁজে কারে খুঁজে

নিজেরে হারাই ভাবনা বনে
মিলন বাসর সাজাই মনে
পিতম মোর এলো না যে
কাঁদিছে তাই বাঁশি
___________

২৫/৬ => ঝিকিমিকি তারা -- চাঁদ দিল ধরা --

ঝিকিমিকি তারা -- চাঁদ দিল ধরা --
নদী জলে
দুরু দুরু বুকে -- ঢল ঢল চোখে
তুমি এলে

ভ্রমরা ফুলের কানে গুন গুন গায়
রঙিন প্রজাপতি কেঁপে কেঁপে যায়
আগমনে তব পরান আমার
কত দোলে

মিলন বাসর ঘরে
আমার সম্বোধনে
সোহাগে রাখিলে আঁখি আঁখির পরে।

তোমার আমার সেই মিছেমিছি খেলা
সফল হলো বুঝি এই মধু বেলা
অনুরাগে তাই হাত দুটি ধরো
প্রিয় বলে
___________