পুদিনা পাতা

অরুন্ধতী পুরকাইত,

পোর্ট ব্লেয়ার, আন্দামান

গরমকালে ঘেমে-নেয়ে বাড়ি আসার পর যদি কেউ পুদিনার শরবত করে দেয়, তাহলে তো কথাই নেই! পুদিনা আমাদের শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতেও সাহায্য করে।

পুদিনা পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে যা ক্যান্সার, হৃদরোগ, অ্যালঝাইমারসের মতো ভয়ংকর রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে। এছাড়া পুদিনা পাতায় যে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল থাকে তাও নানাভাবে আমাদের উপকারে লাগে।

পুদিনা পাতা একটি সাধারণ আগাছা ধরনের গাছ। খুব সহজেই মাটিতে বা টবে পুদিনার চাষ করা যায়। বিশ্বের অনেক দেশেই পুদিনা গাছ জন্মে থাকে। বিভিন্ন দেশে পুদিনার বেশি ব্যবহার হচ্ছে তেল তৈরিতে। পুদিনার গাছ থেকে পাওয়া তেলের নাম পিপারমেন্ট অয়েল। পুদিনার সুগন্ধির কারণে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার যেমন কাবাব, সলাদ, চাটনি ইত্যাদি তৈরিতে পুদিনার ব্যবহার হয়। এছাড়া মাছ, মাংস, সস, স্যুপ, স্টু, চা, তামাক, শরবত ইত্যাদি তৈরিতে ও পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়।

আসুন জেনে নেওয়া যাক পুদিনা পাতা খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে-

পুদিনা স্বাদ ও খাওয়ার রুচি বাড়ায়, খিদে বাড়ায়, বল বৃদ্ধি করে, মনে ও শরীরে সুখের আমেজ আনে।

অত্যধিক মলত্যাগ ও মূত্রাবেগ থামায়, কফ ও বাত কমায়। কাশি, অজীর্ণ বা বদহজম, পেটের অসুখ, একটানা পুরানো পেটের অসুখ, পুরনো জ্বর ও আন্ত্রিক রোগ সারায়। কৃমি ও অরুচি নাশ করে, বমি থামিয়ে দেয়।

পুদিনার চাটনি যেমন খেতে মুখরোচক তেমনি হজমেও সাহায্য করে।

পুদিনা চা পুদিনার পাতা, দুধ, চিনি, গোলমরিচ ও মৌরি গরম জলে দিয়ে এ চা তৈরি করতে হবে।

পুদিনা পাতা ওষুধ, টুথপেস্ট, মিন্ট চকোলেট, ক্যান্ডি, চুইয়িংগাম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

পুদিনা পাতার ঔষধি গুণঃ


অরুচি দূর করে পুদিনা:

পুদিনা পাতা বেটে জলে গুলে শরবত করা যায়। সে ক্ষেত্রে কাঁচা পাতা ৮ থেকে ১০ গ্রাম নিতে হবে। পুদিনা পাতার চাটনি একাধারে ৮ থেকে ১০ দিন খেলেও অরুচি কমে যাবে।


পেটের বায়ু দূর করতে:

পুদিনাপাতা, তুলসীপাতা, গোলমরিচ ও আদা পরিমাণ মতো একসাথে মিশিয়ে পিষে নিয়ে জলে সেদ্ধ করে, একটা ঘন ক্বাথ তৈরি করুন। এ ক্বাথ চামচে নিয়ে অল্প একটু জিভ দিয়ে চেটে অন্তত ৪ বার করে ৩ দিন খেলে পেটের বায়ু দূর হবে ও খুব ক্ষিদে পাবে।


টাইফয়েড দূর করে:

পুদিনাপাতা, সবুজ তুলসী ও তুলসীর রস এক সাথে মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করে দিনে চারবার খেতে হবে।এতে টাইফয়েড সেরে যাবে।


নিউমোনিয়া সারতে পুদিনা:

পুদিনাপাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে নিউমোনিয়া সেরে যায়।


দাঁতের মাড়িতে:

পুদিনা পাতা পুড়িয়ে সেই ছাই দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।


পেট ফাঁপায় :

এক্ষেত্রে পুদিনার শরবত সারা দিনে ২-৩ বার করে কয়েক দিন খেলে পেটে বায়ু জমা বন্ধ হবে এবং খাদ্য রুচিও ফিরে আসবে এবং হজম শক্তিও বাড়বে।


দাদ সারাতে পুদিনা:

পুদিনা পাতার রস দাদে লাগালে দাদ সেরে যায়।


সর্দি সারাতে পুদিনা:

নাকের ভিতর ১-২ ফোটা দিলে সর্দি সেরে যায়।


বমি দূর করতে:

পুদিনার শরবত দিনে ২ থেকে ৩ বার করে কয়েক দিন খেলে বমি সেরে যাবে।


মূত্রাল্পতা দূর করে :

পুদিনার পাতা ৮ থেকে ১০ গ্রাম ভালোভাবে বেটে তাতে সামান্য লবণ ও কাগজিলেবুর রস এবং ঠান্ডা জল মিশিয়ে শরবতের মতো করে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেতে হবে। এর ফলে প্রস্রাবের অসামঞ্জস্যতা দূর হবে। তারপর এ সমস্যার জন্য মাঝে মাঝে খেলেও প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকবে।