শখের জিনিসটা তুলে না রেখে ব্যবহার করুন
সুস্মিতা ভান্ডারী কর,
পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর

অঙ্কন- সুস্মিতা ভান্ডারী কর
একটা ভালো জামা কিনলাম, জুতো কিনলাম, ব্যাগ কিনলাম, যেকোনো কিছু আমরা
অনেক টাকা জমিয়ে প্ল্যান করে, শখ করে একটা জিনিস কিনলাম। কেনার পরে সেই
শখের জিনিসটা আমরা কি করি? প্রচন্ড যত্ন করে তুলে রাখি কোনো একটি বিশেষ
উপলক্ষ্যে ব্যবহার করবো বলে, কোনো একটা বিশেষ উপলক্ষ্যে আমরা এটা পরবো।
এইযে এতো পরিশ্রম, এতো কষ্ট করে কেনা জিনিসটা যে তুলে রাখি। কয়জন এটা
আসলে আমরা শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারি? আপনি অন্যান্য জিনিসপত্রের কথা
বাধই দেন যেগুলো হয়তো ব্যবহারে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকায় মানুষ যত্ন
করে রাখে।
সোনা,গয়না, হীরা, জহরত যাই বলেন মেয়েদের এক ধরনের অপসেশন কাজ করে যে
এটা কিনতেই হবে, এটা বানাতেই হবে। লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা দিয়ে সোনা গয়না
বানিয়ে আমরা আলমারিতে ফেলে রাখি, লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা নষ্ট করি প্রতি
বছর! শখের সেই জিনিস কিন্তু আমরা পরিনা। আমরা কি করি কারোর একজনের
বিয়েতে পরবো, কারোর একজনের একটা অনুষ্ঠানে পরবো এইভাবে জমিয়ে রাখি। শখ
করেও আমরা বাড়িতেও পরিনা নষ্ট হয়ে যাবে, চুরি হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে
এই টেনশনে। তাহলে এই জিনিস দিয়ে আসলে আমার কি লাভ?
আমার মনে হয় কি জানেন মানুষের প্রত্যেকটা দিনই স্পেশাল। আমি আজ বেচেঁ
আছি। আমি যদি কালকে না বেচেঁ থাকি! আমার এই শখের শাড়ি, শখের চুড়ি, শখের
গয়নাগাটি। যেটা আমার শখ সেটা দিয়ে কে শখ মেটাবে?
আমরা বাড়িতে ব্যবহার করি মেলামাইনের রং উঠে যাওয়া তৈজস পত্র। কিন্তু
সবথেকে দামি সেটগুলো রেখে দিই শোকেসের মধ্যে। কবে কে আসবে, আদৌ আসবে কিনা
তার জন্য। ভালো শাড়ি, কাপড় সব কিছু জমিয়ে রেখে দিই আর বাড়িতে সব সময়
থাকি আমরা হোম লেসের মতো। নিজেদের দিকে তাকাই না, নিজেদের যত্ন নিই না।
টাকা জমাই। টাকা জমিয়ে জিনিস কিনি। জিনিস কিনে জমিয়ে রাখি। সেই জমিয়ে
রাখা জিনিস আমরা কালে ভদ্রে হয়তো পরি আবার জমিয়ে রাখি। আমরা বাইরে
যাওয়ার সময় রেডি হবো। বাইরে যাওয়ার সময় ভালো পোশাকটা পরবো, ভালো
ব্যাগটা নেবো, ভালো ভাবে চলাচল করবো। বাইরের মানুষজন আসলে সেইদিন ঘর
বাড়িতে ভালো বেডশিটটা বিছাবো, ভালো থালা বাটি বের করবো। তো আমরা তো এক
জীবন কাটিয়ে দিই অন্যের সন্তুষ্টির জন্য।
নিজের দিনটাকে স্পেশাল মনে করেন, নিজেকে স্পেশাল মনে করেন, নিজের দিনগুলো
স্পেশাল বানানোর চেষ্টা করবেন; দেখবেন এতে একটা আনন্দ পাবেন। এতে কোনো
দোষ নেই মেলামাইনের বাসনে খাওয়ার কিন্তু আপনার যে দামী কাঁচের
জিনিসপত্রগুলো শোকেসে আছে তার থেকে কিছু অন্তত বের করে নিজে ব্যবহার করে
দেখুন, নিজে একটা ভালো প্লেটে ভাত খান, নিজে একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
সুন্দর চাদরে ঘুমান, বাড়িতে একটা ভালো কাপড় চোপড় পড়ে থাকেন, একটু
পরিপাটি হয়ে থাকেন দেখবেন মনের ভিতর থেকে অনেক শান্তি লাগবে। এর জন্য
হাজার হাজার লক্ষ্য লক্ষ্য টাকার মোটেও প্রয়োজন হয়না। প্রয়োজন হচ্ছে
সদ ইচ্ছার।
আমাদের ভিতর অধিকাংশ মানুষের চিন্তা ভাবনা থাকে জমিয়ে রাখি বাইরে গেলে
পড়বো, বিশেষ উপলক্ষ্যে পড়বো, অনুষ্ঠানে পড়বো। কিন্তু ঘন্টা খানেকের
অনুষ্ঠান, বাইরের ওই ক্ষণিকের সময়ের জন্য আমাদের সঞ্চয়ের অধিকাংশ
ব্যায় করি, শখগুলোকে আমরা অবদমিত করি এবং এই শখের জিনিস কিনে সাজিয়ে
রাখা কনসেপ্ট এটার ভিতরে আসলে কোনো যুক্তি নেই। মানুষের সামনে পরিপাটি
থাকাটা খুব ভালো কিন্তু নিজের জন্য পরিপাটি থাকার অভ্যাসটা প্র্যাক্টিস
করেন দেখবেন অসাধারণ একটা ফিলিংস দেবে ভিতর থেকে। নিজের মন মানসিকতা ভালো
থাকবে, পজেটিভ থাকবে, ঘর বাড়ির পরিবেশ ভালো থাকবে।
শখের জিনিসটা তুলে না রেখে ব্যবহার করেন। দেখেন দিন শেষে ভালো লাগবে।
ভালো থাকবেন।