তীরে ফেরা ঢেউ (পর্ব- ১)

অনিন্দিতা গুড়িয়া,

নিউ-দিল্লি

নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে নিশুতি রাতের বুক চিরে দ্রুতগতিতে ছুটে চলার ট্রেনের ভেতর ততোধিক দ্রুতগতিতে ল্যাপটপের কীবোর্ডে আঙুল চলছে আর ল্যাপটপের স্ক্রিনে দৃষ্টি নিবদ্ধ ঊর্মির। প্রতিটি আঙুলের ওঠাপড়ার সাথে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন আমেরিকার একটি বিখ্যাত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ভারতীয় শাখার বর্তমান সি ই ও ঊর্মি হেমব্রম ফ্রান্সিস।

নামটা শুনে নিশ্চয়ই আশ্চর্য লাগছে, তাই না? আসলে ঊর্মীর মা আদতে একজন বাঙালি ব্রাহ্মণ কন্যা; উর্মিলা মুখার্জি, বাবা সাঁওতাল সন্তান; সুহাস হেমব্রম আর বিবাহ সূত্রে একজন আমেরিকান জেহান ফ্রান্সিস উর্মীর স্বামী। প্রায় বছর দশেক পরে ঊর্মী দেশে ফিরেছে, এখন থেকে সে দেশেই থাকবে।

বাবা সুহাস হেমব্রম আর মা উর্মিলা মুখার্জির পরিচয় প্রেম সবটাই ইউনিভার্সিটি তে পড়াকালীন। এই অসম ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি ঊর্মিলার পরিবার। তাই পিতৃমাতৃহীন সুহাসের হাত ধরে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিল উর্মিলা। ততদিনে অবশ্য উর্মিলা মাস দুয়েকের অন্তঃসত্ত্বা। সুহাসের সন্তান তার গর্ভে প্রতিপালিত হচ্ছিল তখন। তাই আগে পিছে কিছু না ভেবে সুহাসের হাতের সিঁদুর পরে সুহাসের ঘরের ঘরণী হয়ে তার সঙ্গে সংসার বাঁধে উর্মিলা।

মাটি বন-বাদাড় বরাবরই টানে সুহাস কে। আর তাইতো ইউনিভার্সিটি'র পড়া করার পরেও একটি সাঁওতালি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের স্বল্পমাইনের মাস্টার মশাই এর চাকরিটা নেয় সুহাস। স্কুলের পিছনের জমিতে অল্প একটু শাকসবজি ফলিয়ে আর দু'চারটে হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করে মোটামুটি ভালোই চলছিল দিনগুলো।

বিত্তশালী পরিবারের উচ্চ শিক্ষিতা মেয়ে উর্মিলা কিন্তু খুব সহজভাবেই সুহাসের ভালোবাসাকে সঙ্গী করে হাসি মুখে এই গ্রাম্য জীবন বেছে নিয়েছিল। মোটামুটি সচ্ছলভাবেই গ্রামের মধ্যেই ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকতো তারা। কিন্তু বিধিবাম! উর্মির বয়স তখন বোধ করি বছর চারেক হবে, অজানা এক জ্বরে মাত্র তিন দিনের অসুস্থতায় ছোট্ট উর্মি আর প্রানের উর্মিলা কে ছেড়ে চিরদিনের মত বিদায় নেয় সুহাস। সুহাসের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও জন্মসূত্রে উর্মিলা সাঁওতাল নয় বলে নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে সুহাসের চাকরিটাও উর্মিলা পায় না। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই ছোট্ট মেয়েকে সাথে করে আবার অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় উর্মিলা।

এরপর মাস দুয়েক এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে অবশেষে উর্মিলার ইউনিভার্সিটির এক বন্ধুর সহায়তায় একটি অফিসে চাকরি পায় উর্মিলা। কিন্তু ছোট মেয়েকে নিয়ে চাকরি করা ভীষণ অসুবিধা, তাই ওই ছোট্ট বয়স থেকেই উর্মিকে তার মায়ের থেকে আলাদা থাকতে হয় । এইসব কথা মায়ের থেকে জানে নি উর্মি , জেনেছিল সিধু মামা আর স্বপ্না মাসের থেকে । না সিধু মামা বা স্বপ্না মাসী ওর মায়ের নিজের কেউ নয় । ওরা ওর মায়ের অফিস কলিগ এবং ইউনিভার্সিটির বন্ধুও বটে ওরা ।ছোট থেকেই বোর্ডিং এ থেকে পড়াশোনা করেছে উর্মি। তবে ছুটি ছাটায় যখনি বাড়িতে এসেছে মা উর্মিলা কিন্তু মায়ের ভালোবাসা থেকে এতটুকুও বঞ্চিত করেনি মেয়ে উর্মিকে। তখন উর্মিলা নিজেও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পুরো সময়টাই উর্মীর সাথে কাটাতো আর এর জন্য শত অসুস্থতা সত্বেও অফিস থেকে একদিনের জন্য ছুটি নিতো না ঊর্মিলা। সব ছুটি জমা করে রেখে দিত ঊর্মীর আসার অপেক্ষায়।

উর্মি মূলত বছরে দুবার বাড়ি আসত। এক গ্রীষ্মের ছুটিতে আর এক পুজোর ছুটিতে। তবে যখনই বাড়িতে আসত হৈ হৈ করে ওরা কোথাও না কোথাও ঘুরে আসতো কাছে পিঠে থেকে। কখনো বা পিকনিকে যেত। তবে অবশ্যই স্বপ্না মাসি আর সিধু মামাও ওদের সাথে যোগ দিত। স্বপ্না মাসির বরকে দুই একবার দেখেছে উর্মি , ভদ্রলোক বাইরে কোথাও চাকরি করতেন তাই বিশেষ আসার সুযোগ পেতেন না। আর স্বপ্না মাসির বাচ্চাকাচ্চা ও ছিল না তাই একপ্রকার ঝাড়া হাত-পা ছিলেন। এদিকে সিধু মামার সংসার বলতে বৃদ্ধ মা আর বাবা, বিয়ে থা করেননি ব্যাচেলার মানুষ।

উর্মি ছোট থেকেই বুঝতো মায়ের প্রতি কোথাও যেন সিধু মামার একটু অন্যরকম টান আছে। একটু বড় হওয়ার পরে উর্মি বুঝতে পেরেছিল মা ঊর্মিলা সিধু মামার ক্রাশ ছিল। কখনো বেড়াতে গিয়ে বা পিকনিকে গিয়ে অথবা ওদের বাড়িতে এসে উর্মিকে আড়ালে আবডালে সিধু মামা জিজ্ঞেস করত -"তোর বাবা পেতে ইচ্ছে করে না? "

কখনো বা লুকিয়ে উর্মিকে বলতো-" আমাকে একবার বাবা বলে ডাকবি? "

দুজনের এই গোপন কথোপকথন যাতে উর্মিলার কানে না যায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি থাকতো দুজনের। তবে একবার ঘটনাক্রমে উর্মিলার কানে গিয়েছিল কথাটা। উর্মিলা ভীষণ রাগ করেছিল আর খুব বকাবকিও করেছিল।

উর্মির কিন্তু সিধু মামাকে বেশ ভালো লাগে। কখনো কখনো মনের অজান্তে বাবা বলে ডাকতেও ইচ্ছে করে। আসলে বাবা জিনিসটা যে কি সে তো বোঝার আগেই তার বাবা বিদায় নিয়েছে চিরতরে। বাবার স্মৃতি তার কাছে ভীষণ ঝাপসা, মলিন।

ঊর্মিলা সিধুর ব্যাপারটা শুরুর থেকেই বুঝত, কিন্তু খুব ট্যাটফুলি এড়িয়ে চলত।

সুহাস যে তার ভালবাসা, তার প্রাণের অধিক প্রিয়। সেই জায়গাটা সে আর কোন দিনও অন্য কাউকেই দিতে পারবে না। তাইতো উর্মিলা চিরকাল সুহাসের স্মৃতি বুকের গহীনে সযত্নে আগলে চোখের জল লুকিয়ে হাজার বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও হাসিমুখে একলাই মেয়েকে বড় করেছেন।

বছর 50 এর উর্মির আগে সময় যেন নতজানু করে আছে, কাউকে না বললে বোঝাই যাবে না যে উর্মীর বয়স প্রায় ৫০ বছর। ছোট ছোট করে কাটা কুঁকড়ানো চুল, ঈষৎ শ্যামবর্না মাঝারি উচ্চতার, টিকালো নাক আয়ত দীর্ঘ দুটি উজ্জ্বল চোখ এবং মেদহীন নিখুঁত নারী শরীর দেখলে ৩৫ এর বেশি মনেই হয়না। বয়সটাকে ধরে রাখার এই ক্ষমতা উর্মীর বোধ হয় জেনেটিক। কারণ উর্মির মা উর্মিলা এই ৭৩ বছর বয়সেও এমন সুঠাম এবং সুন্দর চেহারার অধিকারিণী যে অনায়াসেই তাকে দেখে বলা যায় যে পঞ্চাশের কোঠায় তাঁর বয়স। সামনের দিকের দুই একটা চুলে পাক ধরলে ও উর্মির ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়মিত ডাই করেন চুলে । দাঁত সবই বর্তমান এখনো। আর পাঁচজন বাঙালি মায়ের মতন তার শরীরের গঠনটাও থুলুথুলু নয় । উর্মির কথায় এই বয়সেও একটা কাটস্লীভ ব্লাউজ আর একটা সিনথেটিক শাড়িতে যে কোন মধ্যবয়সী মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য তার মা যথেষ্ট।

উর্মি গায়ের রং আর মুখশ্রী পেয়েছে তার বাবা সুহাস হেমব্রমের মত তবে চোখ দুটি তার মায়ের মত টানা টানা উজ্জ্বল ভাসা ভাসা।

উর্মির জীবনটা বড় বিচিত্র। আর পাঁচটা স্বাভাবিক মেয়ের মতন যেন নয়। এই যেমন তার বাবার পদবীটাই শুধু আছে বাবার স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত সেই ছোট্টবেলা থেকেই। ঠিক তেমনি স্বামী জেহান ফ্রান্সিস এর নামটাই শুধু তার সাথে আছে, আর আছে জেহানের সাথে সংসার করার এক মাসের অম্ল মধুর স্মৃতি। উর্মির বয়স তখন প্রায় ৪১ বছর, মাত্র মাস ছয়েকের আলাপেই উর্মি থেকে প্রায় বছর পাঁচেকের ছোট আমেরিকার একটি সংবাদ সংস্থার রিপোর্টার ফ্রান্সিসের সাথে বিয়ে করে উর্মি। ওদেশে বর কনের বয়স নিয়ে বিশেষ কেউ মাথা ঘামায়না। বিয়ের মাসখানেকের মধ্যেই কেমন করে না জানি ফ্রান্সিস চিরদিনের মতন হারিয়ে যায় তার থেকে।।অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে অনেক গোয়েন্দা সংস্থাকে টাকাও দিয়েছে কিন্তু কোন ফল হয়নি। আজ অবধি ফ্রান্সিসের কোন খোঁজ পায়নি সে। তাও প্রায় ন দশ বছর হয়ে গেল। এখন ঊর্মি ফ্রান্সিসের আশাও ছেড়ে দিয়েছে।

আমেরিকার ঝাঁ চকচকে জীবনের হাতছানিকে সার্থক করতে মায়ের স্নেহ- ভালোবাসা এবং সাথে আরো অনেক কিছুকেই উপেক্ষা করে প্রায় কুড়ি- বাইশ বছর আগে সে পাড়ি জমিয়েছিল ওদেশে। টাকা-পয়সা নাম যশ কোন কিছুরই অভাব নেই আজ কিন্তু তবুও কোথাও যেন জীবনের অনেকটাই খামতি থেকে গেছে।

নাম যশ খ্যাতি প্রতিপত্তি বিলাস বৈভবের পেছনে ছুটতে ছুটতে উর্মি এখন যেন বড় ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। একটু অবসর চায় সে। তার ওপর একাকীত্বের যন্ত্রণা ঊর্মীকে কুরে কুরে খায় ।

চাকরিটা পাকাপাকিভাবে ছেড়ে নিজের দেশে নিজের মায়ের কাছে ফিরতে চেয়েছিল উর্মি। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কুশলী কর্মচারীকে ছাড়তে নারাজ কোম্পানি। তাইতো সিইও-র পদ দিয়ে তাকে নিজের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।

উর্মি ঠিক করেছে যাই হোয়ে যাক না কেন আর ফিরবে না ওদেশে। এখন থেকে এখানেই পাকাপাকিভাবে থাকবে সে অন্তত যতদিন তার মা উর্মিলা বেঁচে আছেন।

দীর্ঘ আঠেরো ঘন্টার একঘেয়ে প্লেজ জার্নি শেষে দেশের মাটিতে পা দিয়েই ট্রেনে চেপে বসেছে উর্মি। এখন সে তার মায়ের সাথে দেখা করতে চলেছে। উর্মির পি এ নেহা উর্মীর এহ্যানো আচরণে যারপরনাই অবাক হয়েছিল। এত বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিইও কিনা ডোমেস্টিক ফ্লাইট না নিয়ে খুব সাধারন মেইল ট্রেনের এক সাধারণ যাত্রী হিসেবে জার্নি করবেন! নেহা সরাসরি না হলেও আমতা আমতা করে বারন করেছিল এই জার্নিতে। কিন্তু উর্মির আবেগের কাছে মাথা নত করতেই হলো। আসলে উর্মি সেই ইউনিভার্সিটি তে পড়ার দিনগুলোর স্মৃতি আর একবার ঝালিয়ে নিতে চাইছিল । তবে যে আবেগ আর অনুভূতি নিয়ে উর্মী ট্রেনে চেপেছিল ট্রেনে ওঠার পরেই তা কেমন যেন মিইয়ে গেল । আসলে অনেকগুলো বছর হয়ে গেল এই ধরনের জীবনযাত্রার সাথে একেবারেই অভ্যস্ত নয় উর্মি। কিন্তু তাও কি করা যাবে টিকিট যখন হয়েই গেছে আর ট্রেনে চেপে বসেছে আর ট্রেন ও এখন চলতে শুরু করেছে অগত্যা উর্মি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

অফিসের ভারতীয় শাখায় সি ই ও হয়ে এলেও এখনই সে অফিস জয়েন করবে না। বেশ কিছুদিনের ছুটি নিয়েছে সে। কিন্তু জরুরী কিছু মেইল করার আছে আর তাই ট্রেনে বসেই সে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করে চলেছে।

নাহ্ এবার কাজটা বন্ধ করতেই হবে, মাথাটা যেন দপদপ করছে। ল্যাপটপ বন্ধ করে ব্যাগের মধ্যে রেখে মাথার চুলে আঙুল দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে সিটের মধ্যে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বোজে উর্মি।

প্রায় ২২ বছর পর ও ট্রেনে চেপেছে। কত কথা ভীড় করে আসছে মনের মধ্যে। উর্মি প্রথমবার দূরপাল্লার ট্রেনে চড়েছিল ওর ২১ বছর বয়সে। তখন সে কলেজের পড়া শেষ করে ইউনিভার্সিটি তে পড়ার জন্য প্রথমবার নিজের রাজ্য ছেড়ে ভিনে রাজ্যে যাত্রা করেছিল। বাবার কথা মায়ের কথা স্বপ্না মাসি সিধু মামা স্কুল কলেজ বোর্ডিং ইউনিভার্সিটির কথা চিন্তা করছিল উর্মি । প্রায় বছর আষ্টেক আগে স্বপ্না মাসির বর মারা গেছেন। সিধুমামার বাবা-মাও গত হয়েছেন অনেক আগেই। উর্মির মা উর্মিলা স্বপ্না মাসি আর সিধুমামা তিনজন ওরা খুব একা। কিন্তু তাই বলে ওদেরকে একাকিত্বে ভুগতে দেয়নি উর্মি । এখন স্বপ্না মাসী সিধু মামা আর ওর মা উর্মিলা ওরা তিন বন্ধুতে একসাথে একই জায়গায় থাকে। সব ব্যবস্থা অবশ্যই উর্মি করেছে। যেহেতু ওদের তিনজনের উর্মি ছাড়া আর কেউ নেই তাই সকলের দায়িত্ব উর্মি নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে।

নিজে যেহেতু বিদেশে থাকে তাই তাঁদের দেখভাল করার জন্য খুব সুন্দর একটা হোমে ওদেরকে রাখার ব্যবস্থা করেছে উর্মি। যেখানে ওদের প্রতিনিয়ত ডাক্তারি পরিষেবা খাওয়া-দাওয়া সেবা শুশ্রষা যত্নআত্তি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কোন অভাব হবে না। বাড়তি পাওনা হিসেবে আরো পাঁচজন সমবয়সী মানুষের সাথে হেসে খেলে গল্পগাল করে ফুল ফল সবজির বাগান করে পুকুরের ছিপ ফেলে জন্মদিন এবং আরো অন্যান্য উৎসব অনুষ্ঠান সেলিব্রেশন করে নেচে গেয়ে বেশ আনন্দেই দিনগুলো কাটছে ওদের।

নিয়ম করে প্রতিদিনই ফোন কলে মায়ের সাথে কথা বলে উর্মি । কখনো কখনো ভিডিও কলও করে সে। ওর মা বুড়িয়ে না গেলেও স্বপ্না মাসী বা সিধু মামা ডায়াবেটিস এবং হার্টের পেশেন্ট। ওদের দুজনকে দেখলে বয়স হয়েছে বেশ বোঝা যায়। তবে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর দুজনেই, বয়স বা রোগের ধার ধারে না ওরা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সিধু মামা হোমের প্রতিটা সেলিব্রেশন এর গাছপালার এমনকি পুকুর থেকে ধরা মাছের ছবি পর্যন্ত মুঠো ফোনে ক্যামেরাবন্দি করে পাঠায় উর্মীর কাছে।

বিদেশের যান্ত্রিক নিঃসঙ্গ জীবনে উর্মির কাছে বাঁচার রসদ ছিল ছবিগুলো। কিন্তু কতদিন এইভাবে বাঁচা যায় ! ক্রমশ হাঁপিয়ে উঠছিল উর্মি। তাইতো বিলাসবহুল আবাসনে বিরাট বড় ফ্ল্যাট দামি গাড়ি চাকর ড্রাইভার মালি ম্যানেজার বিলাসবহুল জীবনযাপন সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছে এখানে ওর মায়ের কাছে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবার আশায় ।

ছোট থেকে অনেকবার জোরাজুরি করা সত্ত্বেও ওর মা উর্মিলা কখনই উর্মিকে ওর বাবার সেই সাঁওতালি গ্রাম বা সেই প্রাইমারি স্কুলে নিয়ে যায়নি কখনো। মনে মনে উর্মি ঠিক করেছে এবারে নিশ্চয়ই সে ঐসব জায়গা ঘুরে দেখে আসবে । এইসব নানান সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখটা লেগে এসেছিল বুঝতেই পারেনি।

হঠাৎ বেশ সরগোল আর তার সাথে হকারের "চায় গরম, গরম চায়! কালি ভেঁস কি গোরি চায়"........

"পুরি তাজা ভাজি গরম".........এইসব শুনতে শুনতেই বুঝতে পারল যে ট্রেন কোন স্টেশনে এসে থেমেছে । স্টেশনের নামটা চোখে পড়তেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন হু হু করে উঠলো।

ক্রমশ.......